‘মসজিদ আমাদের ব্যারাক, ঈমানদাররা আমাদের সৈনিক’

ধর্মপরায়ণ তবে ক্যারিশমেটিক এরদোগান নির্বাচিত হয়ে ১৫ বছরের ক্ষমতাকে আরো সম্প্রসারিত করতে চান।এরদোগানকে তুরস্কে আগামী ২৪ জুন অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে তার দল। বিজয়ী হলে তিনি হবেন দেশটির প্রতিষ্ঠাতা মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের পর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও ক্ষমতাধর শাসক।রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান আধুনিক তুরস্কের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা। সমর্থকরা তাকে দেশের রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখে থাকেন।

‘সুলতান’ হিসেবে খ্যাত এরদোগানকে ইতোপূর্বে গাজী পার্কে কয়েক মাসের বিক্ষোভ সহ্য করতে হয়েছে। দা ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউটের তুরস্ক বিষয়ক গবেষক সোনার ক্যাগাপ্তে বলেন, এরদোগানের অর্থনৈতিক রেকর্ড এবং কর্তৃত্ববাদী মজলুম হিসেবে তার ইমেজই তাকে প্রেসিডেন্ট পদে জয় এনে দেবে। তবে গত বছর তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একনায়ক নই, এটা আমার রক্তে নেই। দেড় দশকে তুরস্কের নজিরবিহীন প্রবৃদ্ধির জন্য বিশ্বব্যাপী নন্দিত তিনি। তুরস্কের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এবং ধর্মপরায়ণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে তার সৃদঢ় সমর্থন রয়েছে, যারা তার শাসনে উন্নতি লাভ করেছেন। তুরস্কে বিগত কয়েক দশকের ঘনঘন সামরিক অভ্যুত্থান এবং দুর্বল জোট সরকারের পর স্থিতিশীল সরকার উপহার দেয়ার জন্য এরদোগানের প্রশংসা করা হয়।

তিনি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর লাগাম টেনে ধরেছেন। নতুন ব্রিজ, বিমানবন্দর অন্যান্য বৃহৎ প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি এক সময়ের তলাবিহীন তুরস্ককে শক্তিশালী বাজারে পরিণত করেছেন। তার শাসনামলে সাধারণ তুর্কিদের আয় তিনগুণ বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরেছেন তিনি।এক সময়ে আধা পেশাদার হিসেবে ফুটবল খেলোয়াড় এবং ব্যবসায় শিক্ষায় স্নাতক ডিগ্রিধারী এরদোগান ১৯৯৪ সালে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি দেড় কোটি লোকের এ শহরটির ট্রাফিক জাম এবং বায়ু দূষণ রোধে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।যখন তার ইসলামঘেঁষা দলকে নিষিদ্ধ করা হয় তখন বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি এ সময় একটি ইসলামী কবিতা পাঠ করেন। কবিতাটি ছিল এরকম- ‘মসজিদ আমাদের ব্যারাক, গম্বুজ আমাদের হেলমেট, মিনার আমাদের বেয়নেট এবং ঈমানদাররা আমাদের সৈনিক।’ এই কবিতার মধ্যে ধর্মীয় উসকানির গন্ধ পায় সেক্যুলার শাসকরা। তবে এরদোগান বারবারই এ কবিতা আবৃত্তি করেন।২০০১ সালে এরদোগান এবং তার সহযোগী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল ইসলামঘেঁষা জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) গঠন করেন।

পরের বছরের নির্বাচনে দলটি ভূমিধস বিজয় অর্জন করে। এরপর আরো দুটি সংসদ নির্বাচনেও জয় পায় একেপি।দেশবাসী বিশাল বিশাল নির্বাচনী প্রচারাভিযানে তিনি বিরামহীন অংশ নেন। অসুস্থতাও তাকে থামাতে পারে না। নির্বাচনী প্রচারণার মাঝেই হয়তো স্থানীয় কোনো ফুটবল খেলায় মেতে ওঠেন তিনি।

তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য করতে দেশে ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্ককে সদস্যপদ দিতে গড়িমসি করায় ক্ষুব্ধ এরদোগান বলেন, ইইউর সদস্যপদের জন্য তুরস্ক অনাদিকাল অপেক্ষা করবে না।সাম্প্রতিক সময়ে এরদোগান তুরস্কে সেক্যুলারদের প্রবর্তিত হিজাবের ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করেছেন।

মদ বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছেন তিনি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছেলেমেয়েদের সহ-অবস্থান নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এরদোগান বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে ইসলামিক সংস্কৃতি এবং গণতন্ত্র একত্রে চলতে পারে না।’ তুর্কি নির্বাচনে তরুণ ভোটাররাই প্রধান ফ্যাক্টর।তুরস্কের ইজিয়ান উপকূলের ইজমির বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাফেতে হিজাব পরিহিত একদল ছাত্র-ছাত্রী খোশগল্প করছিলেন এবং চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে শিক্ষকের লেকচার নোটগুলি দেখে নিচ্ছিলেন।

১৫ বছর আগে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ক্ষমতায় আসার আগে এই দৃশ্যটি অকল্পনীয় ছিল। তুরস্কের পুরোনো ধর্মনিরপেক্ষ নিয়ম অনুযায়ী ক্যাম্পাসে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।